টমেটো খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়

টমেটো হল একটি সুস্বাদু রসালো ফল। যেটি অনেক পুষ্টিতে ভরপুর রয়েছে। এটি আমরা সবজি হিসেবে তরকারিতে ব্যবহার করে থাকি যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন থাকার জন্য রোজ সকালে একটি করে হলেও টমেটো খাওয়া উচিত। এই টমেটো থেকে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

টমেটো খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
টমেটোতে যেসব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং এর থেকে আমরা সুস্থ স্ব্যাস্থের অধিকারি হতে পারি।

টমেটো খাওয়ার উপকারিতা:

এমনিতেই টমেটো খেলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়। টমেটো খেলে যা উপকার পাওয়া যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-

  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য টমেটোর ভূমিকা অনেক বেশি। যদি আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজম শক্তির সমস্যার সম্মুখীন হই তাহলে আমাদের প্রতিদিন টমেটো খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থেকে যা হজমে সহায়তা করে।
  • আমার জানি, টমেটোতে অনেক পরিমাণের ভিটামিন সি রয়েছে। যা আমাদের চোখের দৃষ্টি প্রখর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হলে আমাদের চোখেরও কোনো সমস্যা দেখা দেয় না।
  • বিভিন্ন চিকিৎসকদের মতে ওজন কমানোর জন্য টমেটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আমরা ডায়েট কন্ট্রোল খাবার তালিকায় সালাদ হিসেবে টমেটোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। টমেটোতে যে অ্যামিনো এসিড রয়েছে তা আমাদের পেটের মেদ কমাতে সহায়তা করে। তাই টমেটো খেলে আমাদের বাড়তি ওজন কমে যায়।
  • টমেটোতে যে সকল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। কেননা এটি পটাশিয়ামে ভরপুর একটি সবজি যা খেলে আমাদের রক্তচাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের টমেটো খাওয়া উচিত।
  • টমেটো হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য অনেক কার্যকরী একটি সবজি। এতে থাকা লাইকোপেন সহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো রক্তের অনুচক্রিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে সহজেই রক্ত জমাট বাঁধে যা হার্ট কে সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • গবেষকদের মতে টমেটোতে ক্রোমিয়াম নামে এক ধরনের খনিজ থাকে। যা আমাদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্যেও উপকারি হয়।
  • এছাড়াও টমেটো আমাদের ত্বককে পরিষ্কার এবং সতেজ করে রাখে। যা মূলত টমেটোতে থাকা লাইকোপিন নামের এক ধরনের এনজাইমের ফলে হয়ে থাকে। যা সাধারণত ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
  • টমেটোতে অনেক পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা আমাদের হাড়কে শক্ত রাখতে সক্ষম হয়। এছাড়াও কাঁচা টমেটোতে ভিটামিন কে থাকে যা আমাদের হাড়ের ক্ষয় সাধন করে থাকে।
  • এছাড়াও টমেটোতে যে অ্যান্টি-কার্সোজনিক রয়েছে তা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের টমেটো খাওয়া উচিত।
  • চর্ম রোগ প্রতিরোধেও টমেটোর রস অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান।

টমেটো‌ খাওয়ার অপকারিতা:

টমেটো খেলে যেমন আমাদের উপকার পাওয়া যায় ঠিক তেমনি এটি বেশি খেলে আমাদের অপকারও হয়। কেননা অতিরিক্ত কোনো কিছুই আমাদের জন্য ক্ষতি বয়ে আনে। নিম্নে টমেটো খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে দেওয়া হলো-

  • টমেটো এক ধরনের অম্লীয় সবজি যেখানে প্রচুর পরিমাণে ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিড রয়েছে। যা আমাদের পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা বৃদ্ধি করে তোলে। তাই প্রচুর পরিমাণে টমেটো খেলে আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। যার ফলে আমরা প্রায়ই পেটের সমস্যায় ভুগে থাকি। তাই আমাদের সীমিত আকারে টমেটো খাওয়া উচিত।
  • যাদের টমেটোতে অ্যালার্জি থাকে তাদের টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা তারা যদি টমেটো খায় তাহলে তাদের জীভ ও গাল ফুলে যেতে পারে এবং মুখের ভিতর চুলকানি সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এতে হিস্টামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ রয়েছে যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক।
  • চিকিৎসকদের মতে অতিরিক্ত টমেটো খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। টমেটোতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেট যদি এর পরিমাণ আমাদের শরীরে বৃদ্ধি পায় তাহলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়।
  • আমরা জানি টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন আছে। যদি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের ত্বকের রং বদলাতে শুরু করে অথবা  বর্ণহীন হতে পারে।
  • যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টমেটো খাওয়া ক্ষতিকর। কারণ অতিরিক্ত টমেটো খেলে তাদের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

অর্থনীতিতে টমেটোর ভূমিকা:

অর্থনীতি উন্নয়নে টমেটোর ভূমিকা অপরিসীম। কৃষকরা টমেটো চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। আমাদের দেশে কাঁচা ও পাকা উভয় টমেটো সবজি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে কৃষকরা বাজারজাত করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। এছাড়া পাকা টমেটোর রস বা কেচাপ তৈরি করে বাজারজাত করে থাকে। যা আমরা মূলত খাবারের রুচি বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করে থাকি।

এছাড়াও এই সস বা কেচাপ বিদেশের রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমার টমেটোর আচার-চাটনি তৈরি করেও অর্থ উপার্জন করা যায়। এছাড়াও বলা যায় যে টমেটো চাষাবাদ করে আমাদের দেশের কৃষকরা অর্থনীতিতে লাভবান হচ্ছে। তাই বলা যায় যে অর্থ উপার্জন করার জন্য টমেটোর চাষাবাদ করার ভূমিকা অনেক।

টমেটোতে কোন ভিটামিন থাকে:

টমেটোতে কাঁচা থাকলে এক ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায় এবং পাকা থাকলে আরেক ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। টমেটো কাছে থাকলে ভিটামিন সি এর মাত্রার পরিমাণ অনেক। এছাড়াও কাঁচা টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন কে,বি এবং খনিজ ফসফেট যা আমাদের রক্ত নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও আমাদের বাতের ব্যথা এবং হাড় ক্ষয় রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

অপরদিকে পাকা টমেটোতে রয়েছে ম্যালিক এসিড। যা আমাদের খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণ এর লাইকোপেন থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবি উপকারি। যা আমাদের মাড়ি মজবুত রাখে এবং দাঁত শক্ত রাখে। এছাড়াও ভিটামিন সি রয়েছে যা আমাদের ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও রয়েছে লাইকোপেন প্রোস্টেট ও কলোরেকটাল যা সাধারণত ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।

প্রতিদিন কয়টি টমেটো খাওয়া উচিত:

গবেষকদের মতে আমাদের প্রতিদিন তিনটি করে টমেটো খাওয়া উচিত। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড ও ম্যালিক এসিড রয়েছে যার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারক। এছাড়াও অতিরিক্ত টমেটো খেলে পেটের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে যার ফলে খাদ্যনালীতে আমাদের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন তিনটি করে টমেটো খাওয়া এর বেশি নয়।

কেননা তিনটি টমেটো খেলেই আমরা সম্পূর্ণ পুষ্টি ভোগ করতে পারবো। এছাড়া প্রতিদিন কাঁচা টমেটো একটি করে খেলেই আমাদের বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তি পাবো। তাই আমাদের সীমিত আকারে টমেটো খাওয়া উচিত। কেননা অতিরিক্ত কোন কিছুই অকল্যাণকর বয়ে আনে। তাই বলা যায় যে টমেটো খেলে আমাদের অনেক উপকার পাওয়া যায়।

লেখকের শেষ মন্তব্য:

টমেটো খেলে যা যা উপকার পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমরা পাশাপাশি এর ভিতরে থাকা ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও টমেটো খাওয়ার মাধ্যমে আমরা কিভাবে সুস্ব্যাস্থের অধিকারি হবো তা এই আর্টিকেল পড়ে আমরা জানতে পেরেছি। মূলত এই আর্টিকেল পড়ে আমরা এর উপকারিতা সম্পর্কে এবং এর পার্শ্ববর্তী ক্ষতিকারক সম্পর্কেও জানতে পেরেছি।

আশা করি আপনারা টমেটোর গুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং এটা কি কি কাজে লাগে তা জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। এইরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত নজর রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর্লিটেক বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url