চুলের যত্নের জন্য অ্যালোভেরা এবং এর উপকার সম্পর্কে বিস্তারিত

 অ্যালোভেরা অর্থাৎ ঘৃতকুমারী একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি কিছুটা ক্যাকটাসের মতো দেখতে কিন্তু আসলে এটি ক্যাকটাস নয়। চুলের যত্নের জন্য অ্যালোভেরার গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া আমরা অ্যালোভেরা থেকে অনেক উপকার পেয়ে থাকি।

চুলের যত্নের জন্য অ্যালোভেরা এবং এর উপকার
অ্যালোভেরা প্রাচীনকাল থেকে ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সাধারণত এর উৎপত্তি স্থল হলো মিশর। যা ৬ হাজার বছর আগ থেকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে এবং এখনো আমরা এই অ্যালোভেরা থেকে অনেক উপকার পেয়ে আসছি।

ভূমিকা:

ঘৃতকুমারী যার ইংরেজি নাম হচ্ছে Aloe Vera। এটি একটি রসালো ভেষজ উদ্ভিদ যা বহুজীবী প্রজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এর পাতার মধ্যে কিছুটা পিচ্ছিল লালার মত শাঁস থাকে। এটি আমাদের চুলের যত্নের জন্য খুবই উপকারী হয়ে থাকে।

আমাদের শরীরের জন্য যতগুলো অ্যামিনো এসিডের প্রয়োজন তার সবগুলো এর ভিতরে পাওয়া যায়। এছাড়াও অ্যালোভেরার মধ্যে ভিটামিন এ, বি, সি, এবং ভিটামিন ই পাওয়া যায়। আর আমরা জানি ভিটামিন এ আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী।

অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম:

অ্যালোভেরা যেহেতু ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি রসালো জাতীয় উদ্ভিদ, সেহেতু এটি সকাল বেলা খালি পেটে খাওয়া উচিত। অর্থাৎ অ্যালোভেরার যে পিচ্ছিল শাঁস রয়েছে তা একটি গ্লাসের মধ্যে নিয়ে একটা গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে হয়।

যদি এটার স্বাদ কিছুটা তিতাঁর মতো লাগে তাহলে ওই গ্লাসের মধ্যে কিছুটা পরিমাণ লবণ এবং মধু মিশিয়ে খেতে হবে। যা সাধারণত ঘুম থেকে উঠে সকাল বেলা খালি পেটে খেতে হবে। তাহলে আমরা এর থেকে আশানুরূপ ফল পাবো।

ত্বক ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরা:

ত্বক ও চুলের জন্য অ্যালোভেরা একটি খুবই কার্যকরী ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। নিম্নে ত্বক ও চুলের যত্নের জন্য অ্যালোভেরার ব্যবহার দেওয়া হলো-

চুল এর জন্য অ্যালোভেরা:  সাধারণত চুলের শুষ্কতা ভাব দূর করার জন্য অ্যালোভেরার ব্যবহার হয়ে থাকে। অ্যালোভেরার মধ্যে যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল রয়েছে তা চুল পড়া এবং চুলের খুশকির সমস্যার সমাধান করে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরাতে পাওয়া ভিটামিন ই চুলের যত্নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরার শাঁস এর সাথে যদি আমলকির কিছুটা রস মিশিয়ে দেওয়া হয় এরপর তা চুলে লাগানো হয়। তাহলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। 

এছাড়াও নারিকেল তেল বা লেবুর রস অথবা টক দই যদি ৩ চা চামচ অ্যালোভেরার শাঁসের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে। তাহলে চুল পড়ার সমস্যার সমাধান হবে এবং উজ্জলতা বৃদ্ধি পাবে। আবার যদি পিঁয়াজের রসের সাথে ২-৩ চামচ অ্যালোভেরার শাঁসের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগানো হয় তাহলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। এছাড়া হলুদের সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে তা চুলের সাথে লাগিয়ে ২৫-৩০ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেললে চুল হবে শিল্কি এবং নরম। তাই বলা যায় যে চুলের যত্নে অ্যালোভেরার গুরুত্ব অপরিসীম।

ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা:  অ্যালোভেরাতে যেসব অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় তা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। অ্যালোভেরাতে প্রায় ২২ রকমের অ্যামিনো এসিড পাওয়া যায় আমাদের শরীরের জন্য এবং ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী। অনেক সময় আমাদের ত্বকে ক্ষত বা দাগ দেখা যায়। এই ক্ষত বা দাগের জায়গায় নিশ্চিন্তে আমরা অ্যালোভেরা লাগাতে পারি। ফলে আমাদের সহজেই দাগ বা ক্ষত ঠিক হয়ে যায়।

এছাড়াও অ্যালোভেরাতে যেসব ভিটামিন অর্থাৎ ভিটামিন সি ভিটামিন এ ভিটামিন কে আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসেবে পালন করে থাকে। এছাড়াও রোদে পোড়া ভাব দূর, ত্বকের দাগ দূর করে থাকে। অ্যালোভেরাতে যেসব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে তা ত্বকের কালো দাগ দূর করে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। তাই বলা যায় যে রাতে অ্যালোভেরা ফেসওয়াশের মতো লাগিয়ে তারপর মুখ ধুয়ে নিলে আমাদের ত্বক পরিষ্কার হয়ে যায়। তাই গবেষকের মতে অ্যালোভেরা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী।

অ্যালোভেরার উপকারিতা:

অ্যালোভেরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। অ্যালোভেরা থেকে আমরা অনেক উপকৃত হয়। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো-
  • অ্যালোভেরা আমাদের শরীরের ক্ষতস্থান বা পুড়ে যাওয়া স্থানের চিকিৎসা করে থাকে। অর্থাৎ আমাদের হাত,পা,ত্বক যেখানেই পুড়ে থাকুক না কেন যদি আমরা সেই জায়গায় অ্যালোভেরা লাগাই তাহলে তা দ্রুত নিরাময় হবে এবং ঠান্ডা থাকবে।
  • রোদে পোড়া ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী। অ্যালোভেরাতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তা রোদে পোড়া ত্বকের রন্ধ্র গুলোকে শ্বাস নিতে সহায়তা করে।
  • অ্যালোভেরাতে এক ধরনের এনজাইম রয়েছে যার নাম প্রটিয়োলাইটিক এটি উৎসেচক হিসেবে কাজ করে থাকে যা আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী। যা চুল পড়া বন্ধ করে থাকে।
  • অ্যালোভেরা শরবত খেলে আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় এবং ইনসুলিটি সেনসিটিভি বাড়ে। যার ফলে আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকে।
  • অ্যালোভেরাতে যেসব অ্যামিনো-এসিড রয়েছে তো আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে থাকে।
  • অ্যালোভেরার পাতার ভিতর যে পিচ্ছিল শাঁস  রয়েছে তা খেলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের উপশম ঘটে।
  • অ্যালোভেরা জুস খাবার হজমে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • অ্যালোভেরা আমাদের ত্বকের কালো দাগ,বয়সের ছাপ, ব্রণ দূর করে থাকে।
  • অ্যালোভেরাতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা করে এবং দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।

অ্যালোভেরার অপকারিতা:

প্রাচীনকাল থেকেই অ্যালোভেরা ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সব সময় আমরা এর উপকারই পেয়ে থাকি। তবে এটি অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এবং কিছু অনিয়মে ব্যবহারের ফলে মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে উঠে। অ্যালোভেরার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে দেওয়া হলো-

অ্যালোভেরার ভিতরে যে রসালো অংশ অর্থাৎ পিচ্ছিল অংশ রয়েছে যদি এটি প্রাকৃতিকভাবে বের হয় তাহলে সেখান থেকে অ্যালোলেটেক্স নামের এক ধরনের তরল পদার্থ বের হয়। যা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকারক হয়ে উঠে। এই তরল পদার্থের রঙ কিছুটা হলদে রকমের হয়। যা খেলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতি করে থাকে।

এর ফলে আমাদের কিডনির সমস্যা, হৃদপিন্ডের সমস্যা, পেশি দুর্বলতা ইত্যাদি করে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরা থেকে যাদের এলার্জি রয়েছে তাদেরকে অ্যালোভেরা থেকে দূরে থাকা উচিত। এছাড়াও এই অ্যালোলেটেক্স গর্ভবতী মহিলার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ফলে গর্ভবতী মহিলার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এছাড়াও অ্যালোভেরা ত্বকে লাগিয়ে যদি আমরা রোদে বের হয় তাহলে আমাদের ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং জ্বালাপোড়া করবে যদি আমরা বেশি রোদে বের হয়। তাই আমরা যদি বেশিক্ষণ অ্যালোভেরা লাগিয়ে থাকি তাহলে আমাদের ত্বকে শুষ্কতা দেখা দিবে এবং ত্বকে টান পড়তে পারে। কেননা অতিরিক্ত কোন কিছু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।

পুরুষের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা:

বর্তমানে ফর্সা ত্বকও রোদে পুড়ে কালো হয়ে যাচ্ছে। অ্যালোভেরার জেল তার উপশম ঘটাচ্ছে। অ্যালোভেরাতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস ও পানি রয়েছে। যা ত্বকের জন্য খুব ভালো ময়েশ্চারাইজ এবং হাইট্রেড করে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুরুষের বয়সের ছাপ বুঝতে দেয় না।

 অ্যালোভেরা পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরীমূলক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। অ্যালোভেরার জুস যদি সকাল বেলা খালি পেটে প্রতিদিন খাওয়া হয় তাহলে পুরুষের শরীরে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং এর দুর্বলতা কেটে যাবে। এছাড়াও অ্যালোভেরাতে থাকা বিভিন্ন এনজাইম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুরুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

আবার অ্যালোভেরার ফেসপ্যাক বানিয়ে যদি প্রতিদিন রাতে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর তা ধুয়ে ফেললে পুরুষের ত্বক পরিষ্কার এবং উজ্জ্বলতা হবে। এছাড়াও অ্যালোভেরা জুস পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করে থাকে। যার ফলে পুরুষের যৌন দুর্বলতা দূর হয়ে যায়। তাই বলা যায় যে পুরুষের জন্য অ্যালোভেরা একটি উপকারী ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ।

লেখক এর শেষ মন্তব্য:

চুলে যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার দেখতে গিয়ে আমরা এর উপকারিতা এবং অপকারিতা এছাড়াও অ্যালোভেরা কিভাবে খেলে আমরা গুণ পাবো তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরা কি কি কাজে লাগতে পারে সেসব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মূলত এই আর্টিকেল পড়ে আমরা এলোভেরার ভেষজ গুণ সম্পর্কে এবং এর পার্শ্ববর্তী ক্ষতিকারক সম্পর্কেও জানতে পেরেছি।

আশা করি আপনারা অ্যালোভেরার ভেষজ গুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং এটা কি কি কাজে লেগেছে সেসব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমার সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত নজর রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর্লিটেক বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url