প্রতিদিন খেজুর খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
খেজুর এমন একটি ফল যা আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। প্রাচীনকাল থেকে এই ফল খেয়ে আসছে, কোনো কোনো দেশে এটি প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিচিত আছে। এই খেজুর ফল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় খাবার ছিল। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু হয়ে থাকে। সাধারণত প্রতিদিন খেজুর খেলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়। যা আমাদের পুষ্টিহীনতার অভাব পূরণ করে থাকে।
তবে শুধু রমজান মাসেই নয় সারা বছর এই খেজুর আমাদের খাওয়া উচিত। কেননা এটি অনেক পুষ্টিগুণসম্মত একটি ফল। যা আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনে ভালো রকমের প্রভাব ফেলে।
খেজুরের প্রকারভেদ:
পৃথিবীতে প্রায় একশ রকমের চাঁদের খেজুর চাষ করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি সারা পৃথিবীতে এবং আমাদের দেশে রপ্তানির জন্য বিখ্যাত। নিম্নে কয়েকটি খেজুরের প্রকারভেদ দেওয়া হলো-
- মরিয়ম খেজুর: এটি এক ধরনের শুকনো খেজুর এবং কালচে ও শক্ত হয়ে থাকে। এই খেজুর অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টি গুণসম্পন্ন। সাধারণত বাংলাদেশে ইফতারের সময় এই খেজুর মানুষ খেয়ে থাকে। এই মরিয়ম খেজুর বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান, ইরাক, মিশর এ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু মদিনার মরিয়ম খেজুরের থেকে অন্যান্য খেজুর সম্পূর্ণ আলাদা।
- মাবরুম খেজুর: এই খেজুর পৃথিবীর অন্যতম একটি প্রাচীন ফল। এই মাবরুম খেজুরে প্রাকৃতিকভাবেই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও মিনারেলস রয়েছে। এছাড়াও এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম এবং আয়রন রয়েছে। এটি খেতে কিছুটা চুইংগাম এর মতো হয়ে যায়। এই খেজুরটি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি দেখতে লালচে এবং আরেকটি দেখতে কালো। লালচে রঙের মাবরুম খেজুরটি আকারে একটু বড় হয়ে থাকে। অপরদিকে কালো রঙ্গের মাবরুম খেজুরটি তুলনামূলক একটু ছোট হয়ে থাকে।
- আজওয়া খেজুর: এই খেজুরটি অন্যান্য খেজুরের তুলনায় অনেক কালো এবং এতে সাদা সাদা কিছুটা দাগ রয়েছে। এই আজওয়া খেজুরটি খেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। এ খেজুরটি পুরো সৌদি আরবে চাষের জন্য বিখ্যাত। এই আজওয়া খেজুর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় খেজুর ছিল। এই খেজুরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে যেমন ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং কে । এছাড়াও রয়েছে এই খেজুরে নিয়াসিন,থিয়ামিন,ফলেট এবং রিবোফ্লেভিন যা আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য উপকৃত হয়।এই আজওয়া খেজুরটি অনেক বরকতময় খেজুর বলেও আখ্যায়িত রয়েছে।
- আম্বার খেজুর: এই খেজুরটি সৌদি আরবের বৃহত্তম খেজুর নামে পরিচিত। এটি শুধুমাত্র মদিনা শহরেই উৎপাদিত হয় আর কোন জায়গায় চাষ করা যায় না। এই খেজুরটি তুলনামূলকভাবে অনেক বড় এবং চার কোণা কার দেখতে হয়। এই খেজুরটি কালচে বাদামি এবং পাতলা চামড়াযুক্ত মিষ্টিহীন হয়ে থাকে। এই খেজুরে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও খনিজ লবণ যা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এই খেজুর গ্লুকোজের ঘাটতি কমায় এবং স্নায়ুশক্তি বৃদ্ধি করে।
- কালমি খেজুর: মরিয়ম খেজুরের মতো এই কালমি খেজুর বাংলাদেশের প্রচুর ব্যবহৃত হয়। এই খেজুর সৌদি আরবে সাফাওয়ি নামে পরিচিত হলেও অন্যান্য জায়গায় কালমি খেজুর নামেই পরিচিত। এটি সাধারণত ওমানের একটি জাত এটি খেতে অনেক মিষ্টি এবং আকারেও বেশ বড়, যা দেখতে গাঢ় বাদামের রঙের হয়ে থাকে। এই খেজুরটি সাধারণত সুপার ফুড নামে পরিচিত। এই খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, শর্করা ও ফাইবার রয়েছে।
- শুকনো খেজুর বা খোরমা খেজুর: এই খেজুরটি সাধারণত সৌদি আরবে চাষ করা হয়ে থাকে। যেটি বাংলাদেশেও বাজারজাত করা হয়। এই খেজুরের প্রচুর পরিমাণের শর্করা, ফাইবার, ভিটামিন, পটাশিয়াম রয়েছে। এই খেজুরটি লম্বা আকৃতির এবং কালচে ধরনের হয়ে থাকে। কিডনি সমস্যা ও স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই খেজুর এর প্রচলিত রয়েছে।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা:
খেজুর হলো একটি মধ্যপ্রাচের ফল। এতে প্রচুর পরিমাণের ভিটামিন রয়েছে এবং এটি একটি পুষ্টিকর গুণ সম্পন্ন ফল। খেজুর খেলে যা যা উপকার হয় তা নিম্নে দেওয়া হলো-
- খেজুর আমাদের কর্মশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
- প্রতিদিন খেজুর খেলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি অনেক প্রখর হয় আগের তুলনায়।
- খেজুর আমাদের ডায়াবেটিস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- খেজুরে প্রচুর পরিমাণের ফাইবার রয়েছে যা আমাদের পরিপাকে সহায়তা করে থাকে এবং আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- খেজুরের ভিতরে যে পরিমাণে আয়রন থাকে তা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে। ফলে আমাদের রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে বেশি বেশি খেজুর খাওয়া উচিত।
- ত্বকের যত্নে খেজুরের ভূমিকা অপরিসীম। এটি ত্বকের ফ্যাকাসে ভাব দূর করে থাকে। তাই ত্বকের যত্নের জন্য প্রতিদিন খেজুর খাওয়া উচিত।
- আমার জানি খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা আমাদের হার খেয়ে মজবুত রাখে এবং ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও মাড়ি মজবুত করতে সহায়তা করে থাকে।
- খেজুরের মধ্যে ভিটামিন বি এবং কোলাজের রয়েছে। যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ স্নায়ুশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।
- খেজুরের মধ্যে যে পরিমাণের আয়রন থাকে তা আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকৃত হয়। চুলের যত্নে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া উচিত।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা:
সাধারণত খেজুর খেলে বেশিরভাগই আমরা উপকৃত হয় কিন্তু এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদেরকে কম পরিমাণের খেজুর খেতে হবে। কেননা এটি একটি মিষ্টি ফল। তাই বেশি বেশি খেজুর খেলে সুগার বেড়ে যাবে ফলের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। তাই সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমাদেরকে প্রতিদিন প্রয়োজন মতো খেজুর খাওয়া উচিত।
তাহলেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য খুবই উপকার পাওয়া যায় না। এছাড়াও যাদের খেজুরে এলার্জি রয়েছে তাদেরকে খেজুর পরিহার করা উচিত। যেহেতু খেজুরে অনেক ক্যালরি থাকে সেহেতু আমাদেরকে খুবই কম কম খেজুর খাওয়া উচিত।
কেননা বেশি ক্যালোরি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এটি ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। আর বেশি ওজন বৃদ্ধি পেলে আমাদের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও হৃদরোগের জন্য ওজন বৃদ্ধি মারাত্মক রকমের প্রভাব ফেলে থাকে। তাই আমাদের প্রয়োজনমতো খেজুর খাওয়া উচিত।
প্রতিদিন কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত:
আমরা জানি অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া উচিত না। কেননা অতিরিক্ত কোনো কিছুই আমাদের জন্য ক্ষতিকর সৃষ্টি করে থাকে। খেজুর একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল হলেও এটি সকাল বিকাল খাওয়া উচিত নয়। যদি আমরা বেশি খেজুর খেয়ে ফেলি তাহলে আমাদের স্ব্যাস্থের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যাবে না।
কেননা এতে অনেক পরিমাণের ক্যালরি থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য জন্য উপযোগী নয়। তাই দিনে ৫-৬টি খেজুর বা ১০০-১৫০ গ্রাম খাওয়া উচিত। তাহলে এটি মিষ্টি হওয়ার ফলেও আমাদের সুগার,ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
খালি পেটে ভেজানো খেজুর খেলে কি হয়:
খেজুরের সম্পূর্ণ স্বাদ নেওয়ার জন্য এটি ভিজিয়ে রাখার পরে খাওয়া উচিত। এটি কমপক্ষে (৭-৮) ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পরে যদি খাওয়া হয় তাহলে এর সম্পূর্ণ স্বাদ পাওয়া যাবে। যদি আমরা এটি রাতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খায় তাহলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক কল্যাণকর বয়ে আনবে।
কেননা ভেজানো খেজুর এতে থাকা ফ্যাটিক এসিড এবং ট্যানিন এসিড দূর হওয়ার ফলে সম্পূর্ণ পুষ্টি শোষণ থাকে। ভেজানো খেজুর খেলে আমাদের পেট ভরে থাকে ফলে আমার অতিরিক্ত খেজুর খেতে পারি না। ফলে ওজন ও বৃদ্ধিতে কোন ভয় থাকে না এবং ক্ষুধাও কম লাগে। যার ফলে আমরা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। যার ফলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়। সে সঙ্গে এটি বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
কেননা এতে অনেক পরিমাণের ফাইবার রয়েছে। এছাড়াও আমাদের মস্তিষ্ক সচল রাখে, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়, স্নায়ু শক্তি বৃদ্ধি করে, আমাদের ত্বকের যত্ন রাখে, বিভিন্ন রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ইত্যাদি।
দুধের সাথে খেজুর খেলে কি হয়:
যেহেতু দুধ একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তরল পদার্থ,ফলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধের সাথে যদি দুইটি করে খেজুর খাওয়া হয় তাহলে, আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়। কেননা দুধ হচ্ছে ক্যালসিয়ামের উৎস আর এতে যদি দুইটি করে খেজুর মিশে খাওয়া হয় তাহলে এর পুষ্টি অনেকগুন বেড়ে যাবে। ফলে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যাবে।
এটি সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এটি শীতের সময় বয়স্কদের জন্য খুবই উপযোগী হয়। দুধের সাথে খেজুর মিশিয়ে খেলে ভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তোলে পাশাপাশি এটি যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তোলে। ফলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন রাত্রে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে দুইটি করে খেজুর মিশিয়ে খাওয়া আমাদের উচিত।
লেখকের শেষ মন্তব্য:
প্রতিদিন খেজুর খেলে আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকার পাওয়া যায় তা আমরা বিস্তারিত জানতে পেরেছি।এর পাশাপাশি আমরা আরও এর পার্শ্ববর্তী ক্ষতিকারক সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। এছাড়াও প্রতিদিন কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত তা জানতে পেরেছি। এর ভিতরে থাকা ভিটামিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সব কিছু আমরা বিস্তারিত জানতে পেরেছি।
আশা করি আপনারা সবাই খেজুর খেলে যা উপকার পাওয়া যায় তার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এইরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত নজর রাখুন।
আর্লিটেক বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url