কিভাবে হার্টকে ভালো রাখা যায় এবং খাবারের তালিকা

 

হার্টের সমস্যা অর্থাৎ হৃদরোগ যেটিকে সাধারণত নীরব ঘাতক বলা হয়। কেননা এটি এমনি একটি অসুখ যা সাধারণত বাইরে থেকে বোঝা যায় না এজন্য একে নীরব ঘাতক বলা হয়ে থাকে। এই হার্টকে ভালো রাখার জন্য নিয়মিত আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং আটকে ভালো রাখার জন্য খাবারের তালিকা গড়ে তুলতে হবে।
কিভাবে হার্টকে ভালো রাখা যায় এবং খাবারের তালিকা

শুধুমাত্র নিয়মিত খাবারের তালিকা গড়ে তুললে হবে না এর সাথে সাথে ব্যায়ামও করা লাগবে এবং এর বাইরে হার্টকে ভালো রাখার জন্য কিছু কাজও‌ করা লাগবে। তাহলে আমরা আমাদের হার্টকে ভালো রাখতে পারবো।

ভূমিকা:

হার্ট অর্থাৎ হৃদপিণ্ড আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বর্তমানে হার্টের সমস্যার কারণে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এটি সাধারণত রক্ত পরিশোধন রক্ত সঞ্চালন এবং অক্সিজেন সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। এছাড়াও এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হার্টের ভূমিকা অপরিসীম।

সাধারণত বুকের বাম পাশে দুই ফুসফুসের মাঝখানে কলার মোচার মত দেখতে অঙ্গটি হৃদপিণ্ড অর্থাৎ হার্ট। হার্টকে ভালো রাখা আমাদের সবারই দায়িত্ব এবং কর্তব্য। হার্ট কে ভালো রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত খাবারের তালিকা গঠন করতে হবে। এছাড়াও হার্টের জন্য শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।

হার্টের সমস্যার লক্ষণ:

আমাদের হার্টকে ভালো রাখার জন্য আগে এর লক্ষণ গুলো জানতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখতে সক্ষম হবো। সাধারণত পাম্পের মত কাজ করে থাকে। যা মূলত রক্ত পরিশোধন করে। সারা দেহে রক্ত হার্টে গিয়ে পরিশোধন হয়ে থাকে। যা মূলত মহাধমনী ও মহাশীরার মাধ্যমে রক্ত হার্টে গিয়ে পৌঁছায়। যদি এগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয় অর্থাৎ রক্ত হার্টে গিয়ে না পৌঁছায় তাহলে আমাদের হার্টের সমস্যা দেখা দিবে। নিম্নে কয়েকটি হার্টের সমস্যার লক্ষণ দেওয়া হলো-
  • হার্টের সমস্যার সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ গুলোর মধ্যে বুকের মাঝে ব্যথা অনুভব করা। এই ব্যথাটি বুকের বাম পাশেও হবে না ডান পাশেও হবে না একেবারে মাঝ বরাবার হবে। যাকে সাধারণত ডাক্তাররা (সেন্ট্রাল অফ চেস্ট পেইন) বলে থাকে। এই ব্যথাটি সাধারণত মনে হবে যে বুকের হাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে বুক ধরফর করছে।
  • এছাড়াও হাতে ও ঘাড়ে ব্যাথা হবে। যেন মনে হবে যে গলা অনেক জোরে চেপে রেখেছে। এছাড়া বাম হাতের নিচের দিকে প্রচন্ড রকমের ব্যথা অনুভব হবে। এটি সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের হয়ে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে বোঝা যায় না।
  • আমাদের যদি হার্টের সমস্যার আগে ফুসফুসে পানি জমে যায় ফলে আমাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় এবং কাশি হয় অনেক। তাই অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হলে শীতে হার্টের সমস্যার আগাম লক্ষণ বলে বিবেচনা করা হয়।
  • এছাড়াও আরেকটি পরিচিত আগাম লক্ষণ হলো বুক ব্যথার সাথে সাথে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া। যদি কারো বুক ব্যাথা সাথে অনেক ঘাম ঝরে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তাহলে যেকোনো সময় হার্ট ব্লক হয়ে যেতে পারে।
  • আবার যদি আমাদের বমি বমি ভাব হয় অথবা প্রচন্ড পরিমাণে বমি হয় এবং এর সাথে যদি অনেক পেট ব্যথা করে তাহলে সেটিও হার্টের সমস্যার আগমন লক্ষণ বলে বিবেচনা করা হয়।
  • এছাড়াও শরীরের ক্লান্তি একটি বড় ধরনের সমস্যা। ক্লান্তি হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় এবং এটি যদি দীর্ঘদিন ধরে হয় তাহলে হার্টের সমস্যা দেখা দিবে।
  • আবার আমরা যদি কর্মরত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ি এবং এটি যদি ঘন ঘন হয়ে থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি হার্টের সমস্যার আগামী লক্ষণ।

কিভাবে হার্টকে ভালো রাখা যায়:

বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষই হার্টের সমস্যার কারণে মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশের জরিপ অনুযায়ী প্রতিবছর হার্টের সমস্যার কারণে প্রায় ২-৩ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। যেভাবে আমরা হার্টকে ভালো রাখবো তা নিম্নে দেয়া হলো-
  • নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে হাঁটাচলা করতে হবে। কেননা অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে হাঁটাচলা করলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে এবং হার্টও ভালো থাকবে
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। এছাড়াও খেলার মাধ্যমে আমাদের ব্যায়াম হয়ে যাবে।
  • অতিরিক্ত চিন্তা করা যাবে না অর্থাৎ কোন প্রকারের  মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না।
  • প্রতিদিন কর্মরত অবস্থায় ফাঁকে ফাঁকে আমাদেরকে একটু করে বিশ্রাম নিতে হবে। না হলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ওজন বৃদ্ধি করা যাবে না। অতিরিক্ত ওজনের ফলে হার্টে চাপ খায়। ফলে আমাদের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাহলে আমরা হার্টকে ভালো রাখতে পারব।
  • এছাড়া কোন প্রকারের মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না। কেননা মাদকদ্রব্য এবং ধূমপান আমাদের হার্টকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলে এবং হার্ট অকেজো করে দেয়।
  • সব সময় আমাদেরকে হাসিখুশি থাকতে হবে এবং পজেটিভ চিন্তাধারা মনোভাব নিয়ে থাকতে হবে।
  • এছাড়া রক্তচাপ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কেননা হার্টের সমস্যার জন্য এগুলো মারাত্মকভাবে দায়বদ্ধ থাকে।
আরো পড়ুন: হৃদরোগের কারণ এবং প্রতিকার

হার্ট ভালো রাখার খাবার তালিকা:

  • হার্টকে ভালো রাখার জন্য আমাদেরকে ব্রকলি খাওয়া উচিত। কেননা ব্রুকলিতে যে পরিমাণের এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে তা আমাদের রক্তে কোলেস্টরের মাত্রা কমিয়ে দেয়। হলে আমরা হার্টের সমস্যার ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে পারবো।
  • এছাড়াও ফলের মধ্যে হার্টকে ভালো রাখার জন্য আপেল অন্যতম। কেননা আপেলে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা আমাদের হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখতে সক্ষম হয়। তাই প্রতিদিন দুটি করে হলেও আপেল খাওয়া আমাদের উচিত।
  • আবার শাকের মধ্যে পালং শাক আটকে ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাক। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম,ভিটামিন বি৬ যা আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখে।
  • এছাড়াও হার্টের সুস্থতার জন্য টমেটো খাওয়া আমাদের উচিত। কেননা টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফাইবার, পটাশিয়াম আমাদের হার্টকে ভালো রাখতে সক্ষম হয়।
  • তারপর সবুজ চা হার্টের জন্য খুবই উপকারী। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের হার্টকে ভালো রাখে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন বিকালে সবুজ চা খাওয়া।
  • আমার কফি অর্থাৎ ব্ল্যাক কফি আমাদের হার্টের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের উচিত দিন সকালে ব্ল্যাক কফি খাওয়া।
  • এছাড়াও ছোলা হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্ডিওভাসকুলার গুণসম্পন্ন ফল। প্রচুর পরিমাণ এর ফাইবার এবং প্রোটিন। আমাদের উচিত খালি পেটে প্রতিদিন এই জন্য ছোলা খাওয়া।
  • এছাড়াও স্ট্রবেরি ব্ল্যাকবেরি ব্লুবেরি হার্টের জন্য খুবই কার্যকরী এবং উপকারী একটি ফল। যেটি হৃদরোগের সমস্যার সমাধান করে থাকে।

হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার:

হার্টকে ভালো রাখার জন্য আমাদের খাদ্যের তালিকায় যেসব খাবার হার্টের জন্য ক্ষতিকারক সেগুলো পরিহার করা। তাহলে আমরা আমাদের হার্টকে সুস্থ সবল রাখতে সক্ষম হবো। নিম্নে হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবারের তালিকা দেওয়া হলো-
  • যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে চিংড়ি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা চিংড়িতে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল রয়েছে যা আমাদের হার্টকে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে।
  • মাছের মাথা বা মাছের ডিম বেশি পরিমাণে খেলে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। কারণ এটি রক্তে লিপিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করে যা হার্টের জন্য ক্ষতিকারক।
  • আবার যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে ডিমের কুসুম খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলা উচিত। ডিমের কুসুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের কোলেস্টেরল। আরেকজন হৃদরোগীর জন্য তা মারাত্মক রকমের ক্ষতিকারক।
  • এছাড়াও কোল্ড ড্রিংকস প্রচুর পরিমাণে পান করলে হার্টের সমস্যা হতে পারে। কারণ এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং প্রচুর পরিমাণে সুগার।যা আমাদের ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। ফলে সহজেই আমাদের হার্ট অসুস্থ হয়ে যায়।
  • আবার ফাস্টফুড হার্টের রোগীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক বয়ে আনে। কেননা এতে অনেক পরিমাণের ফ্যাট,উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল পাওয়া যায়।
  • এছাড়াও কলিজা মাথার মগজ এবং নেলি হার্টের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। এটি বেশি পরিমাণে খেলে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। সহজেই আমাদের হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লেখকের শেষ মন্তব্য:

আমরা আমাদের হার্টকে কিভাবে ভালো রাখবো সুস্থ রাখবো তা ইতিমধ্যে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। এছাড়াও আমরা জানতে পেরেছি হার্টকে সুস্থ রাখার খাবারের তালিকা অর্থাৎ কি কি খাবার খেলে আমরা আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে পারবো। আচ্ছা আমরা জানতে পেরেছি হার্টের সমস্যার আগামী লক্ষণগুলো।


আশা করি আপনারা ইতিমধ্যে ভালো রাখার উপায় গুলো জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েবসাইটে নজর রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর্লিটেক বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url