হৃদরোগের কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত

বর্তমানে হৃদরোগ একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ রোগ হিসেবে গড়ে উঠছে। এর চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার করা আমাদের জন্য শ্রেয়। এই হৃদরোগে কারণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
হৃদরোগের কারণ এবং প্রতিকারহৃদপিন্ড সাধারণত রক্তের পরিশোধনের জন্য কাজ করে থাকে। আমাদের হৃদপিন্ড সাধারণত মিনিটে ৬০-৭০ বার সংকোচন ও প্রসারণ করে থাকে। এর ব্যাঘাত ঘটার ফলে হৃদরোগ হয়ে থাকে। যার সঠিক চিকিৎসা আজ পর্যন্ত হয়ে উঠেনি। তাই আমাদের উচিত এই হৃদরোগের প্রতিকার করা।

ভূমিকা:

আমাদের বুকের বাম পাশে অর্থাৎ বক্ষপিঞ্জরের পাশে দুই ফুসফুসের মাঝখানে কলার মোচার মতো ত্রিকোণাকার ন্যায় লাল বর্ণ যুক্ত অঙ্গটি হচ্ছে হৃদপিন্ড। এটি সাধারণত তিন স্তর নিয়ে গঠিত। যেমন- এপিকার্ডিয়াম, মায়োকার্ডিয়াম, এন্ডোকার্ডিয়াম। এই হৃদপিন্ড সাধারণত রক্তের পরিশোধনের জন্য কাজ করে থাকে যা ফুসফুসের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। এই হৃদরোগ আমাদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যা সাধারণত হৃদস্পন্দন এর ব্যাঘাত ঘটার ফলে হয়। তাই আমাদের উচিত হৃদরোগের প্রতিকার করা। কেননা এর চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার করা অনেক সহজ।

হৃদরোগের বেশ কিছু কারণ:

  • উচ্চ রক্তচাপ: আমাদের শরীরের ভেতর যে ধমনী রয়েছে তার ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহের সময় সেই ধমনীর দেয়ালের দেয়া চাপকে রক্তচাপ বলা হয়। হৃদরোগের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি অন্যতম প্রধান কারণ। কেননা আমাদের সাধারণত যে হৃদস্পন্দন রয়েছে তা ক্রমাগতই আগের তুলনায় বেড়ে যায় যার ফলে হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত এই উচ্চ রক্তচাপ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, শারীরিক পরিশ্রম, দুঃখ, উত্তেজনা এর ফলে হয়ে থাকে। যার ফলে হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের উচিত হৃদরোগের প্রতিকার করা।
  • জন্মগত হৃদরোগ: আমাদের সমাজে কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যাদের জন্মগত থেকে হৃদরোগের সমস্যা আছে। যার ফলে তাদের জীবন সব সময় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তারা যদি ঠিকমতো চিকিৎসা না করাই তাহলে তাদের হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
  • হৃদস্পন্দন এর ব্যাঘাত: অনিয়মিত দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়ার ফলে হৃদরোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ সাধারণত মিনিটে যে হৃদস্পন্দন হয় তার বেশি বা কম হলে হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়।
  • রক্তশূন্যতা: আমাদের দেহে রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে হৃদরোগ হয়ে থাকে। কেননা হৃদপিন্ডের কাজ হলো রক্তকে পাম্প করা, যদি রক্তশূন্যতা দেখা যায় তার সংকোচন এবং প্রসারণ এর ব্যাঘাত ঘটবে। যার ফলে হৃদরোগের দেখা দিবে।
  • হার্টের মাংসপেশির সমস্যা: হৃদপিন্ডের যে পেশি রয়েছে তাকে সাধারণত কার্ডিয়ার পেশি বলা হয়ে থাকে। আর এই পেশি সমস্যাকে বলা হয় কার্ডিও-মায়োপ্যাথি। এই রোগের অন্যতম মূল কারণ হলো বংশগতির বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ বংশে যদি কারো ডায়াবেটিস হাঁপানি রক্তচাপে সমস্যা থাকে তাহলে তার এই ধরনের রোগ হতে পারে।
  • তামাক সেবন: বর্তমানে আমাদের সমাজে তামাকের ব্যবহার অনেক সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। যার ফলে অনেকেই তামাকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আর এই তামাক সেবন হৃদরোগের অন্যতম মূল কারণ। এছাড়াও সবচেয়ে বেশি হৃদরোগ এর সমস্যা দেখা দেয় ধূমপান করলে। কেননা এর ধোঁয়া হৃদপিণ্ডকে দুর্বল করে দেয় যার ফলে হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও মদ্যপান করলে হৃদরোগ এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে আমাদের উচিত হৃদরোগের প্রতিকার করা।

হৃদরোগের লক্ষণ:

হৃদরোগ হওয়ার আগে তার কিছু লক্ষণ দেখে আমরা বুঝতে পারি যে তার এখন হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হৃদরোগের আগে তার বুকে প্রচণ্ড রকমের ব্যথা হবে এছাড়াও ভারী বস্তু আছে বলে মনে হবে। হঠাৎ অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া শুরু করবে। কেননা অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রক্ত চলাচলের পথ ব্লক হয়ে যায় যার ফলে রক্তের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক এবং বদহজমের কারণে আমাদের বুক জ্বালাপোড়া করে‌।

এছাড়াও আশঙ্কা মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব সবকিছুই রোগের লক্ষণ হয়ে থাকে। অনেক সময় হৃদরোগের আগে বুকে ব্যথা অনুভব হয় না‌। অর্থাৎ বুকে ভারি কিছু আছে বলে মনে হয় অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটে যায়। যার ফলে শ্বাস নিতেও অনেক কষ্ট হয়। ফলে হৃদরোগ এর দেখা দেয়। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা করলেও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে যেমন-দাঁত,গলা কাঁধ,পিঠ,পেটের উপরের অংশে ব্যাথা অনুভব হলে হৃদরোগের আগামী লক্ষণ দেখা যায়।

আবার জিনগত কারণে হৃদরোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়।

হৃদরোগের প্রতিকার:

আমাদের জীবনে হৃদরোগের চিকিৎসার চেয়ে এর প্রতিরোধ বা প্রতিকার অনেক সহজ। তার জন্য কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে আমরা হৃদরোগের প্রতিকার বা প্রতিরোধ করতে পারবো। যেমন-
  • ধূমপান করা যাবে না। কারণ ধূমপান সবচেয়ে বড় শত্রু হৃদপিন্ডের। যার ধোঁয়া হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • মাদক সেবন করা যাবে না। কেননা ধূমপানের মত মাদক ও হৃদরোগের অন্যতম একটি কারণ।
  • অযথা দুশ্চিন্তা করা যাবে না নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখতে হবে। কেননা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার ফলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোক হতে পারে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার ফলে।
  • আমাদেরকে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেননা অতিরিক্ত ওজনের ফলে হার্টের ঝুঁকি রয়ে যায়।
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম হাঁটাচলা করতে হবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্যে, কেননা হৃদরোগের জন্য ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
  • নিয়মিত শাকসবজি ফলমূল খেতে হবে। কেন এইসব খাদ্য হার্টকে সুস্থ রাখে।
  • এছাড়াও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী হার্টকে সুস্থ রাখা উচিত।
এই সবকিছু মেনে চললে আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে পারে এবং এর প্রতিকার করতে পারব। আর হৃদরোগের ব্যাপারে আমাদের সবসময় সচেতন থাকা উচিত। তাহলে আমরা আমাদের হার্টকে সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে রাখতে সক্ষম হবো।

লেখকের শেষ মন্তব্য:

আমরা হৃদরোগের কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানতে গিয়ে এর বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এছাড়াও এটি কিভাবে কাজ করে তা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের উচিত হৃদরোগের প্রতিকার সম্পর্কে আরও সচেতন থাকা।

আশা করি আপনারা হৃদরোগের প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এই রকম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত নজর রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর্লিটেক বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url