তুলসী পাতার রস খাওয়ার গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত

আমাদের সকলেরই জানা আছে তুলসী পাতার রস এর চমৎকার গুণাবলী সম্পর্কে। তুলসী পাতা সেই আদিমকাল হতে ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পাতায় বিশেষ ধরনের কিছু এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি ইনফ্লেমেটরি রয়েছে। এগুলো আমাদের বিভিন্ন ক্ষতিকারক রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে যেমন হৃদরোগ,ক্যান্সার,ডায়াবেটিস ইত্যাদি।
তুলসী পাতার রস খাওয়ার গুনাগুন

তুলসী পাতা আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে বলে এটি অন্যতম ঔষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। তুলসী পাতার রস যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিকই এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে, যা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

তুলসী পাতার উপকারিতা:

  • সর্দি-কাশি নিরাময়: আমাদের সেই প্রাচীনকাল থেকেই সর্দি-কাশি লেগে থাকে প্রায়ই। সর্দি-কাশি, বুকে কফ জমা এর জন্য তুলসী পাতার ব্যবহার খুবই লাভজনক। এজন্য প্রতিদিন সকালে চায়ের সাথে আদা এবং তুলসী পাতার রস আর একটু মধু ও লেবু মিশিয়ে খেতে হবে। তাহলেই আমরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবো।
  • ডায়াবেটিস এর নিয়ন্ত্রণ: তুলসী পাতার রস আমাদের দেহের ইনসুলিন তৈরিতে কাজে লাগে। তাই খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে আমাদের দেহের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে। তুলসী পাতাতে যেসব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যেমন- ফ্ল্যাবোনয়েড, স্যাপোনিন যা আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
  • গলার ব্যাথার উপশম: গলা ব্যাথার উপশমের জন্য তুলসী পাতার ভূমিকা অনেক। এছাড়া শ্বাসকষ্ট রোগীর জন্যও অনেক উপকারি এই তুলসী পাতার রস পাতা। প্রতিদিন তুলসী পাতার ফুটন্ত পানি দিয়ে গার্গল করলে দ্রুত গলা-ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • বিভিন্ন রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তুলসী পাতার ভূমিকা অপরিসীম। তুলসী পাতার ফুটন্ত পানির মধ্যে কিছু এলাচ মিশিয়ে সেই পানি পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। আমাদের শরীরে যদি কোন জায়গায় কেটে যায় তাহলে সেই কেটে যাওয়ার স্থানে তুলসী পাতা বাটা লাগিয়ে দিলে সেটি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষতিকারক ও যেমন ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে এই তুলসী পাতা।
তুলসী পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে অপরদিকে ঠিক তার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতাও রয়েছে।

তুলসী পাতার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা:

আমারা জানি অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের জন্যে অকল্যানকর বয়ে আনে। ঠিক তেমনি বেশি তুলসী পাতা গ্রহণের ফলে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টি করে থাকে। তুলসী পাতা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে আমাদের শরীরে রক্তের প্রবাহের দিক বৃদ্ধি পেয়ে যায়। যার ফলে আমাদের শরীরে কোনো জায়গায় কেটে গেলে সেইখানে বেশি বেশি রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। যার ফলে অনুচক্রিকার মাধ্যমে যে রক্ত জমাট বাদে তার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায় তাই তুলসী পাতার অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা নিস্তেজ হয়ে পড়বে।

এছাড়াও তুলসী পাতার রস এ অনেক পটাশিয়াম থাকে। যা বেশি খেলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ কমে যায়। তাই যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের তুলসী পাতা না খাওয়াই উত্তম। আবার অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে নারীর জন্য অনেকটাই ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। যেমন সে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। এছাড়াও তুলসী পাতা অনেক বেশি খাওয়ার ফলে পেটে জ্বালা-পোড়া করে। তাই তুলসী পাতা প্রয়োজন ছাড়া আমাদের কখনোই খাওয়া উচিত না।

তুলসী পাতার ব্যবহার:

সেই প্রাচীনকাল থেকে তুলসী পাতার ব্যবহার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন- চুল পরিষ্কার রাখার জন্য তুলসী পাতার রস তেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে চুল একদম পরিষ্কার হয়ে যায়। এছাড়াও সর্দি কাশি জ্বর এর জন্যেও তুলসী পাতার রস ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার কৃমি এবং বায়ুনাশক রোগের জন্য তুলসী পাতার রস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও তুলসী পাতার রস গাছ বীজ বিক্রি করে অর্থনীতি উন্নয়নের ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন পূজার কাজে তুলসী পাতার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তুলসী গাছের প্রকারভেদ:

  • তুলসী বা রাধা তুলসী
  • কালো বা কৃষ্ণ তুলসী
  • কর্পূর তুলসী
  • মিষ্টি তুলসী বা বাবুই তুলসী
  • ক্ষুদ্র তুলসী বা বন তুলসী
  • রাম তুলসী বা শ্যামা তুলসী

তুলসী গাছের বৈশিষ্ট্য:

সাধারণত তুলসী গাছের কান্ড পাতলা এবং সরু লম্বা হয়ে থাকে যা ৪০-৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও তুলসী গাছের পাতা সবুজ, ডিম্বাকার এবং কিছুটা দানাদার আকৃতির হয়ে থাকে। আবার তুলসী গাছে সাধারণত ফুল গ্রীষ্মকালে ফুটে থাকে যা দেখতে কিছুটা বেগুনি রঙের মতো। আর এর সাধ কিছুটা তিক্ততাময় এবং কিছুটা উষ্ণ মিষ্টি ধরনের হয়ে থাকে।

তুলসী গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো- Ocimum Sancium Linn. তুলসী পাতাকে সাধারণত ভেষজ এর রাণী বলা হয়ে থাকে। কেননা এটি বিভিন্ন রোগের নিরাময় করে থাকে।

লেখকের শেষ মন্তব্য:

আমরা এই আর্টিকেল পড়ে তুলসী পাতার রস এর ভেষজ গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এছাড়াও তুলসী পাতার প্রকারভেদ এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। আবার এর ভিতরে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সম্পর্কে জানতে পেরেছি।

আশা করি আপনারা তুলসী পাতার রস এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এই রকম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত নজর রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর্লিটেক বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url